শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন

আপডেট
ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের এমডিসহ চারজনকে দুদকে তলব

ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের এমডিসহ চারজনকে দুদকে তলব

গ্রামীণ টেলিকমের তিন হাজার কোটি টাকার অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ওই চারজনের ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়। আগামী ২৫ আগস্ট তাদের দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়।

সংস্থাটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সূত্রটি জানায়, দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার গ্রামীণ টেলিকমের অর্থ আত্মসাৎ-সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান করছেন।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যাদের তলব করা হয়েছে তারা হলেন, গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল ইসলাম, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও আরেক আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ।

 

দুদকের পাঠানো তলবি নোটিশে ওই চারজনের বিষয়ে অভিযোগে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লোপাট, তাদের পাওনা ৩৬৪ কোটি ১৭ লাখ ৯ হাজার ১৪৬ টাকা পরিশোধকালে অবৈধভাবে অ্যাডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফির নামে ৬ শতাংশ অর্থ কর্তন, তাদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দকৃত সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪০ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ, এই কোম্পানি থেকে ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেছেন তারা।

এর আগে গত মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে তিনটায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধানের কাছে গ্রামীণ টেলিকমের বিভিন্ন নথি হস্তান্তর করেন। দুদক এসব তলব করেছিল।

শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ না দিয়ে তা আত্মসাৎ ও ৩ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে চলতি মাসের শুরুতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব করে দুদক। একই সঙ্গে কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর থেকে লেনদেনের সব তথ্যও চাওয়া হয়।

 

চিঠিতে গ্রামীণফোন কোম্পানিতে গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির শেয়ার ও তার বিপরীতে ১৯৯৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি কত টাকা লভ্যাংশ পেয়েছে, ওই লভ্যাংশের টাকা কোন কোন খাতে কীভাবে ব্যয় করেছে, তার বছরভিত্তিক তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়।

দুদক সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা পরস্পর যোগসাজশে দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের উদ্দেশে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মাসাৎ করেন, এসব বিষয়ে বিশদ নথি চেয়ে চিঠি দেয় দুদক।

এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ হলো, তাদের শেয়ার থাকা গ্রামীণফোনের ‘গ্রামীণফোন ওয়ার্কার্স প্রফিট ফান্ড অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ফান্ড’-এর অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লোপাট, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধকালে অবৈধভাবে অ্যাডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফির নামে ৬ শতাংশ অর্থ কর্তন এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দকৃত সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ করেন তারা।

 

এর আগে ২০১৫ সালে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়নের পাঁচ কর্মচারী প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে এক হাজার ৩০০ শ্রমিক-কর্মচারীর ৭০০ কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করেন। পরে এই মামলা শুনানি শেষে মহানগর হাকিম ইউসুফ হোসেন এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

সম্প্রতি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগসংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনটি কমিশন পর্যালোচনা করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |